খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

Warning: Attempt to read property "post_excerpt" on null in /home/khulnatoday/public_html/wp-content/themes/sahifa/framework/parts/post-head.php on line 73

খেলাপী ঋন : ভারাক্রান্ত ব্যাংক, মন্দায় অর্থনীতি

জালাল উদ্দিন ওমর:

গ্রাহকরা যে ঋন ব্যাংকের কাছে ঠিক সময়ে পরিশোধ করেনি তাই খেলাপী ঋন। ব্যাংক থেকে ঋন গ্রহন করার পর তা ব্যাংকের কাছে যথা সময়ে পরিশোধ না করার প্রবনতা এদেশে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি একটি সংস্কৃতিতে পরিনত হয়েছে। খেলাপী ঋন সময়ের সাথে কেবল বাড়ছেই। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট  অনুযায়ী  মার্চ ২০১৬ শেষে এদেশে মোট খেলাপী ঋনের পরিমান প্রায়  ১,০০,৬৪৮  কোটি টাকা আর একই সময়ে ব্যাংকগুলো কর্তৃক বিতরনকৃত মোট ঋনের পরিমান ৫,৯৮,৬৪৮ কোটি টাকা। সুতরাং মোট বিতরনকৃত ঋনের ১৬.৮২ % খেলাপী । এই প্রথমবার খেলাপী ঋনের পরিমান ১ লক্ক কোটি টাকা অতিক্রম করেছে । ডিসেম্বর ১৫ স্থিতির তুলনায়  এর পরিমান ৮০৪০ কোটি টাকা বেশী। তম্মধ্যে ৫৯,৪১১ কোটি টাকা  ব্যালেন্সশীটে অর্ন্তভুক্ত আর রাইট অফ করা ৪১,২৩৭ কোটি টাকা যা ব্যালেন্সশীটে অর্ন্তভুক্ত নয়। ২০০৮ সালের শেষে খেলাপী ঋন ছিল ২২,৪৮১ কোটি টাকা আর র্ইাট অফ করা ঋনের পরিমান ছিল ১৫,৬৬৭ কোটি টাকা। মোট খেলাপী ঋন ছিল ৩৮,১৪৮ কোটি টাকা। সেই ঋন বেড়ে ২০১৬ সালের মার্চে এসে দাড়িয়েছে ১,০০,৬৪৮ কোটি টাকা। সুতরাং খেলাপী ঋন কি হারে বাড়ছে তা সহজেই পরিমেয়। ব্যাংকগুলো প্রতি বছর বিশাল অংকের খেলাপী ঋনকে রাইটঅফ করে এবং তা ব্যালেন্সশীট থেকে বাদ দেয় । রাইট অফ করা এই ঋন ব্যাল্যান্সশীটের অর্ন্তভুক্ত থাকে না বিধায় ,তা খেলাপী ঋণ হিসাবে ব্যাংকগুলো প্রকাশ করে না । তাছাড়া ব্যাংকগুলো আরো বিশাল অংকের খেলাপী ঋন বিভিন্ন মেয়াদে রিসিডিউল করেছে , যা খেলাপী ঋন হলে ও রিসিডিউল করার কারনে আর খেলাপী ঋনে হিসাব করা হয়নি। ২০১৫ সালে বড় বড় শিল্প গ্রপসমুহ ১৫০০০ কোটি টাকার ঋন পুর্নগঠন করেছে। যদি রিসিডিউল এবং পূর্নগঠন করা ঋন হিসাব করা হয়, তাহলে এই খেলাপী ঋনের পরিমান আরো অনেক বেশী হবে। এই খেলাপী ঋনের ভারে  ব্যাংকগুলো এখন আক্রান্ত  এবং অর্থনীতি মন্দা । খেলাপী ঋনের বোঝা বহন করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়েছে এবং অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ও বাধাগ্রস্থ হয়েছে । তাই যে কোন মুল্যে খেলাপী ঋনের পরিমানকে কমিয়ে আনতে হবে ।

ব্যাংকসমুহ ঋন প্রদানের মাধ্যমেই মুলত আয় করে থাকে । কিন্তু  গ্রাহক যখন এই ঋন নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করে না , তখন তা খেলাপী ঋনে পরিনত হয়। এই অবস্থায় ব্যাংকের কোন আয় তো হয়ই না , অধিকন্তু মুল টাকাটাই গ্রাহকের হাতে আটকে থাকে। ফলে খেলাপী ঋনের কারনে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যায় এবং ব্যাংকগুলোতে সৃষ্টি হয় দায়বদ্ধতা । খেলাপী ঋন ব্যাংকগুলোর গতিকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে রাখে । কারন এই বিশাল পরিমান টাকা থেকে একদিকে ব্যাংক যেমন কোন প্রকার আয় করতে পারে না , ঠিক তেমনি এই ঋন অনাদায়ী হবার কারনে তা নতুন করে অন্য কোন সেক্টরে বিনিয়োগ ও করতে পারে না। ফলে ব্যাংকের আয় কমে যায় , বিনিয়োগ কমে যায় এবং ব্যাংকের আর্থিক গতিশীলতা ও কমে যায়। অপরদিকে এই খেলাপী ঋনের বিপরীতে আয় থেকে প্রভিশন রাখতে হয় বিধায় , ব্যাংকের আয়ের বিশাল একটি অংশ খেলাপী ঋনের ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করতে হয় । এক্ষেত্রে খেলাপী ঋনের পরিমান যদি ব্যাংকের আয়ের সমান হয় তাহলে আয়ের পুরোটাই প্রভিশন ঘাটতির পিছনে ব্যয় করতে হয় । এ অবস্থায় ব্যাংকের কোন আয় অবশিষ্ট থাকে না। অপরদিকে খেলাপী ঋনের পরিমান যদি ব্যাংকের আয়ের চেয়ে বেশী হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ব্যাংক ক্ষতির অবস্থানে থাকে । ফলে ব্যাংকসমুহ আয় করে ও তা ভোগ করতে পারে না। এ অবস্থায় ব্যাংকের অবস্থা দিন দিন নাজুক থেকে নাজুকতর হতে থাকে। খেলাপী ঋনের কারনে সরকারী ব্যাংকগুলোতে বহুদিন থেকেই স্থবিরতা চলছে । একইভাবে খেলাপী ঋনের কারনে অনেক বেসরকারী ব্যাংক ও সমস্যার মধ্যে আটকা পড়েছে।  সুতরাং খেলাপী ঋন কমানোর উপায় খুজে বের করতে হবে । খেলাপী ঋনের কারনে ব্যাংকের ডিপোজিটররা তাদের ন্যায্য লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হয় । অথচ এসব টাকা এদেশের হাজার লক্ষ কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষদের কষ্টার্জিত অর্থ । আর এসব টাকা আজ গুটি কয়েক মানুষের পকেটে ঢুকে আছে। বাংলাদেশে আজ যত টাকা খেলাপী ঋন আছে , তা যদি  খেলাপী না হত , তাহলে শুধুমাত্র এই টাকা দিয়ে দেশে হাজারো স্কুল , কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় , রাস্তা ঘাট , ব্রিজ , হাসপাতাল এবং বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেত । তখন তো এই দেশ অনেক উন্নত হত ।

ব্যাংকগুলোর অদক্ষ ব্যবস্থাপনা , বাচবিচারহীনভাবে ঋন প্রদান এবং কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের টার্গেট খেলাপী ঋন সৃষ্টির জন্য দায়ী । অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রজেক্টের গুরুত্ব এবং ভবিষ্যত যথাযথভাবে বিবেচনা না করে ঋন প্রদান করা হয় । অধিকন্তু ঋন গ্রহীতা ঋনের টাকা পুরোপুরিভাবে ঐ প্রজেক্টের উন্নয়ন এবং পরিচালনায় ব্যয় করছে কিনা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা মনিটরিং করে না। যার ফলে একজন গ্রাহক তার গ্রহনকৃত ঋন থেকে বিরাট একটি অংশ অন্য কাজে যেমন জমি কেনা , দামী গাড়ি কেনা এবং বিলাসবহুল বাড়ী তৈরীর জন্য ব্যয় করে। ফলে প্রয়োজনীয় এবং পুরোপুরি অর্থ যথাযথভাবে শিল্প প্রতিষ্টানে ব্যয় না হবার কারনে উক্ত শিল্প প্রতিষ্টান যথাসময়ে উৎপাদনে যেতে পারে না । ফলে ঐ শিল্প দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঋনগ্রহীতা যথাসময়ে ঋন পরিশোধ করতে পারে না । এ অবস্থায় খেলাপী ঋনের সৃষ্টি হয়। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে একটি শিল্প প্রতিষ্টানের জন্য ঋন গ্রহন করার সময় ঐ প্রতিষ্টানের মুল্য নির্ধারন করা হয় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী । সুতরাং অতিরিক্ত ঋন প্রদান শুরুতেই খেলাপী ঋনের সুযোগ সৃষ্টি করে। এদিকে ঋন প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা ও ব্যাংকের পরিচালকদের প্রভাব খেলাপী ঋন সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী। সরকারী ব্যাংকগুলোতে সিবিএ এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা ঋন প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রভাব সৃষ্টি করে। আর বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে সিবিএ এবং রাজনৈতিক প্রভাব না থাকলেও এখানে প্রভাব বিস্তার করে ব্যাংকের প্রভাবশালী পরিচালকরা। ফলে অনেক সময়ে যথাযথ প্রতিষ্টানের পিছনে ঋন প্রদান না করে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপুর্ন প্রতিষ্টানের পিছনে ঋন প্রদান করা হয়। এইসব ঋন সময়ের ব্যবধানে খেলাপী ঋনে পরিনত হয় । ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া অত্যাধিক মুনাফা অর্জনের টার্গেট এবং মুনাফা অর্জনের অসম প্রতিযোগীতা ও খেলাপী ঋন সৃষ্টির জন্য দায়ী । তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে ব্যবসা বানিজ্যের মন্দাভাবও খেলাপী ঋন সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী। রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা না থাকলে ব্যবসা বানিজ্যে গতি আসে না , শিল্পকারখানা ঠিকমত চলে না। এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী/শিল্পপতিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ফলে তারা ব্যাংকের ঋণ ঠিকমত পরিশোধ করতে পারে না।যার কারনে ঋনখেলাপীর সৃষ্টি হয়। খরা , বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ব্যবসায়ীরা যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় , তখনো তার প্রভাবে খেলাপী ঋনের সৃষ্টি হয়। সরকারের ট্যারিফ নীতির কারনেও ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলে খেলাপী ঋনের সৃষ্টি হয় ।

এদিকে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে ঋন খেলাপীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য পর্যাপ্ত আইন নেই । অর্থাৎ আইনের আশ্রয় নিয়ে খেলাপী ঋন আদায় করাটা কষ্টকর । এ অবস্থায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা খেলাপী ঋন আদায়ের জন্য প্রচন্ড চাপে থাকে । একই সাথে ব্যাংক কর্মকর্তাকে ঋন গ্রহীতার প্রভাবকে মোকাবেলা করতে হয় , যা আরো কষ্টকর । অধিকন্তু খেলাপী ঋন আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করা হলে ও তা দীর্ঘসময় ধরে কেবল চলতেই থাকে এবং মীমাংসা হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় । খেলাপী ঋন আদায়ের জন্য সরকার অর্থঋন আদালত গঠন করলে ও তা খেলাপী ঋন আদায়ে খুব একটা গতি আনতে পারেনি। মামলা বেশি হবার কারনে এখানে ও জট লেগে আছে । তাছাড়া অর্থঋন আদালতের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল । ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋন বেড়ে যাবার কারনে অর্থ ঋন আদালতে মামলার সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে । ফলে ব্যাংকগুলো খেলাপী ঋন আদায় করতে পারছে না আর এক্ষেত্রে ঋনখেলাপীরা সুবিধা পাচ্ছে। অপরদিকে নিলামের মাধ্যমে বন্ধকীকৃত সম্পদ বিক্রি করা ও অনেক সময় সম্ভব হয় না। বন্ধকীকৃত সম্পত্তি বিক্রির জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিলাম/দরপত্র আহবান করা হলে ও , তা অধিকারে যেতে পারবে না মনে করে ক্রেতারা কিনতে কম আগ্রহ দেখায় । কোন ক্রেতা আগ্রহী হলে ও তিনি ঐ সম্পত্তির জন্য অপেক্ষাকৃত কম মুল্য দিতে চায় । ফলে খেলাপী ঋন যথাযথভাবে আদায় করাটা সম্ভব হয় না আর এর পরিমান কেবল বাড়তেই থাকে ।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্টান গোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) কর্তৃক ২০১৫ সালের ০৯ ই ডিসেম্বর প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫৫৮৮ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোস ফ্রম ডেভেলাপিং কান্ট্রিজ : ২০০৪-২০১৩ শীর্ষক প্রতিবেদনটির  তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ২০০৪ সালে ৩৩৫ কোটি ডলার , ২০০৫ সালে ৪২৬ কোটি ডলার , ২০০৬ সালে ৩৩৮ কোটি ডলার , ২০০৭ সালে ৪১০ কোটি ডলার , ২০০৮ সালে ৬৪৪ কোটি ডলার ,  ২০০৯ সালে ৬১৩ কোটি ডলার ,  ২০১০ সালে ৫৪১ কোটি ডলার , ২০১১ সালে ৫৯২ কোটি ডলার ,  ২০১২ সালে ৭২২ কোটি ডলার এবং ২০১৩ সালে ৯৬৭ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এসব অর্থ বাংলাদেশীরা বিদেশে পাচার করেছে। যদি ১ ডলারের গড় মুল্য ৭৫ টাকা হিসাব করা হয় ,  তাহলে এ দশ বছরে পাচার হওয়া অর্থের বাংলাদেশী টাকায় পরিমান ৪,১৯,১০০ কোটি টাকা। আর শুধুমাত্র ২০১৩ সালে পাচারকৃত মুদ্রার বাংলাদেশী মান হচ্ছে ৭২,৫২৫ কোটি টাকা এবং  গড়ে প্রতি বছর পাচার হওয়া অর্থের বাংলাদেশী পরিমান ৪১,৯১০ কোটি টাকা। জিএফআই এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার এবং অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্পেনজারস এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী যেহেতু  প্রতিবছরই  অর্থ পাচার হয়েছে ,  সুতরাং অর্থ পাচারের এই ধারা ২০১৪-২০১৫ সালে ও অব্যাহত ছিল এবং ২০১৬ সালে ও অব্যাহত থাকাটা স্বাভাবিক। এদিকে ২০১৪ সালের জুন মাসে ইউএনডিপি কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় , স্বাধীনতার পর থেকে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জিডিপির আকারের প্রায় ৩০ শতাংশ । সে হিসাবে গত চার দশকে প্রায় ৩ (তিন) লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই অর্থ যে এদেশের বড় বড় শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা  পাচার করেছে সে বিষয়ে তো সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কারন এদেশের সাধারন মানুষেরা অর্থ পাচারের কথা  কল্পনা ও করতে পারে না । এই সব টাকা যে ব্যাংক থেকে গ্রহন করা ঋনেরই একটি অংশ , তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না ।

এ অবস্থায়  ব্যাংকিং খাতে শৃংখলা ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ব্যাংকে খেলাপী ঋনের পরিমান কমিয়ে আনতে হবে এবং নতুন খেলাপী ঋন সৃষ্টির পথকে বন্ধ করতে হবে । এ জন্য নতুন ঋন প্রদানের ক্ষেত্রে এই ঋনকে যথাযথভাবে বিশ্লেষন করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব , সিবিএ প্রভাব এবং পরিচালকদের প্রভাবমুক্ত না হলে তা কখনো  সম্ভব নয়। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় আইন প্রনয়ন করতে হবে। অধিকন্তু অর্থঋন আদালতসহ আইনী প্রক্রিয়াকে আরো উন্নত এবং সংস্কার করতে হবে , যাতে আইনের সাহায্য নিয়ে খেলাপী ঋন আদায় করা যায় এবং ঋনখেলাপীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাছাড়া গ্রাহককে যেন তেন প্রকারে ঋন প্রদান করে মুনাফা অর্জনের টার্গেট ব্যাংকগুলোকে পরিহার করতেই হবে। মুনাফা অর্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ব্যাংককিং সেক্টরকে বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি করেছে । ব্যাংকগুলোকে তার ঋন নীতিমালা পুর্ণবিন্যাস করতে হবে। তাদের ঋনকে বিভিন্ন সেক্টরে বন্টন করতে হবে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋন/বিনিয়োগের  বিপরীতে বিদ্যমান সুদ/মুনাফার হার আরো অনেক কমাতে হবে । বর্তমানে এই হার বছরে ১৬-১৭ % । বাস্তবতা হচ্ছে ১৬-১৭ % সুদ/মুনাফায় ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ গ্রহন করে ব্যবসা করে মুনাফা অর্জন করা এবং ব্যাংকের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করা আসলেই একটা কঠিন ব্যাপার । একজন উদ্যোক্তা যদি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋন গ্রহন করে  এবং সুদের হার যদি ১৫ % ও হয় , তাহলে বছরে শুধু মাত্র ব্যাংকের কাছে তাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে সুদ বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা । তার অফিস ভাড়া মেশিনারী , স্টাফ খরচ , বিদ্যুত ,  গ্যাস এবং অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। এসব পরিশোধের পর তার আয়। সুতরাং ঐ উদ্যোক্তাকে টিকে থাকতে হলে কমপক্ষে ৪০ % মুনাফা করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এমন ব্যবসা খুজে পাওয়া খুবই কষ্টকর , যেখানে এত বেশী মুনাফা আছে। তাছাড়া ব্যবসায় কিন্তু সবসময় মুনাফা হয় না। সুতরাং ঋন/বিনিয়োগের বিপরীতে ব্যাংকের সুদ/মুনাফার হার কমাতে হবে এবং আমি মনে করি সেটার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০% । আশা করি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন । পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিদেরকে নিয়োগ দিতে হবে । কারন অভিজ্ঞতা সবসময় যোগ্যতার বিকল্প হতে পারে না। অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞ না হলে এবং অর্থনীতির গতি প্রকৃতি সম্পর্কে  জ্ঞান ও দুরদর্শিতা না থাকলে তাদের পক্ষে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যাংকিং খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া কখনো সম্ভব নয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ বিষয় সতর্ক না হলে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করলে ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপী ঋন কমবে না , ব্যাংকে উন্নয়ন ও গতিশীলতা আসবে না । একই সাথে অর্থনীতির চাকা ও গতিশীল হবে না। তাই ব্যাংকিং সেক্টর ও একই সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে খেলাপী ঋন কমানোর কোন বিকল্প নেই ।

লেখক :  প্রকৌশলী ও কলামিষ্ট